তালামীয নিউজ২৪ ::
রঈসুল কুররা সামছুল উলামা আল্লামা
ফুলতলী ছাহেব ক্বিবলাহ রহঃ ও
দারুল ক্বেরাত মজিদিয়া ফুলতলী
ট্রাস্ট এক ও অভিন্ন এক নাম। সহিহ
শুদ্ধ ভাবে ইলমে ক্বিরাত তথা
কুরআন শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে
আল্লামা ফুলতলী রহঃ এর ভাবনার
ফসল দারুল কিরাত মজিদিয়া ট্রাস্ট। সেই
১৯৪৩ সালে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে
ছাহেব ক্বিবলাহ রহঃ শুরু করেন আল
কুরআনের এ সুবিশাল খেদমত। সহিহ
শুদ্ধ কুরআন শিক্ষাকে সম্প্রসারিত
করার লক্ষ্যে তিনি ১৯৫০ সালে
প্রতিষ্ঠা করেন দারুল কিরাত মজিদিয়া
ফুলতলী ট্রাস্ট। সেই থেকে
আজ অবধি চলছে দারুল ক্বিরাতের
কার্যক্রম। প্রায় সত্তর বছরের
দীর্ঘ পথচলায় দেশের
সবচেয়ে বড় কুরআন শিক্ষার
আসরে পরিণত হয়েছে দারুল কিরাত
মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট। শুধু
দেশে নয় বিদেশেও দারুল
কিরাতের রয়েছে ঈর্ষনীয়
সাফল্য। এবার দেশে ১৯৮৫টি শাখা ও
বিদেশে ৯৩টি শাখার মাধ্যমে সহিহ
কুরআন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে চার
লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে।
সহিহ কুরআন শিক্ষার অনবদ্য
প্রতিষ্ঠান দারুল কিরাতে মানুষকে
তারতীল ও তাজবীদ সহকারে
কুরআন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। পবিত্র
রমজান মাসকে কেন্দ্র করে
সর্বপ্রথম কুরআন শিক্ষার এ পদ্ধতি
চালু করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত
বুযুর্গ, শরীয়ত ও তরীকতের
হাদী শামসুল উলামা আল্লামা
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.)। এ
প্রতিষ্ঠান থেকে ছয়টি জামাত
(ক্লাস)-সূরা, আওয়াল, ছানী, ছালিছ,
রাবে, খামিছ ও ছাদিছ শেষ করে
উত্তীর্ণ ক্বারীরা অনুমতিক্রমে
দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাখা গঠন
করে কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।
সময়ের পরিক্রমায় এ প্রতিষ্ঠানটি
এখন মহিরুহে পরিণত হয়েছে। এ
বছর ইংল্যান্ডে ৪২টি, ভারতে ৩৭টি,
আমেরিকায় ১১টি শাখা ছাড়াও স্পেন,
কুয়েত, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে
রয়েছে দারুল কিরাতের শাখা। সকল
কেন্দ্রই ট্রাস্টের পক্ষ থেকে
পরিদর্শণ করা হয়। সকল শাখায়
সিলেবাস, রুটিন ও পরীক্ষার
প্রশ্নপত্র ট্রাস্টের পক্ষ থেকে
পাঠানো হয়। সূরা থেকে ছালিছ
জামাতের পরীক্ষা ২৫ ও ২৬
ররমজান, রাবে জামাতের পরীক্ষা
২৮ রমজান গ্রহণ করা হয়। এবং খামিছ
জামাতের পরিক্ষা ট্রাস্টের মাধ্যমে
গ্রহণ করা হয়। ছবিযুক্ত
প্রবেশপত্রের মাধ্যমে দেশে
প্রচলিত পাবলিক পরীক্ষার মতই
পরীক্ষার সকল কার্যক্রম পরিচালিত
হয়। অধিকাংশ খামিছ কেন্দ্রেগুলির
পরীক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ
করেন আল্লামা ইমাদ উদ্দীন
চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ
ফুলতলী। প্রতিটি শাখায় গড়ে দুই
শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এ
হিসেবে এবার চার লক্ষাধিক
শিক্ষার্থী দেশ বিদেশে সহিহ
কুরআন শিখছেন। এ সব কেন্দ্রে
১৫ হাজারেরও বেশি পুরুষ শিক্ষক ও
মহিলা শিক্ষিকা নিযুক্ত রয়েছেন।
রমাজান মাস ছাড়াও ১২৩ টি
কেন্দ্রের মাধ্যমে বছর ব্যাপী
দারুল কিরাতের কার্যক্রম পরিচালিত
হয়। ছাদীছ উত্তীর্ণ
ক্বারীদের সংস্থা ‘লতিফিয়া ক্বারী
সোসাইটি’র সদস্যগণ পবিত্র
কুরআনের খেদমত ছাড়াও নানা
মানবিক কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
প্রতি বছর দেশের ভেতর ও
বাইরে থেকে শেষ জামায়াত
(ছাদিছ) সম্পন্ন করার জন্য কয়েক
হাজার ছাত্র প্রধান কেন্দ্র
ফুলতলীতে আসেন। এ বছর
আড়াই হাজার ছাত্রীসহ প্রধান
কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার ৮শ
শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
ছাত্রীরা নিজ নিজ এলাকার
কেন্দ্রে পড়ে ছাহেব
বাড়ীতে এসে পরীক্ষা দেন
শুধু। এখানে ছাহেব বাড়ির নিজস্ব
তত্ত্বাবধানে থেকে ইফতার,
সেহরী খাওয়াসহ মাসব্যাপী
কেরাতের প্রশিক্ষণ নেন ছাত্ররা।
শাখা বেড়ে যাওয়ায় শেষ জামাত
ছাদিছে প্রতি বছর ভর্তি ইচ্ছুক
ছাত্রদের সংখ্যা বাড়ছে। এতে স্থান
সংকুলানের অভাব দেখা দেয়ায়
অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না।
পাশাপাশি বাড়ছে ব্যয়ের পরিধি। এ
ব্যাপারে প্রধান কেন্দ্রের নাজিম
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহর
ছোট ছাহেবজাদা ও আন্জুমানে
আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা
হুছামুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ছাহেব
কিবলাহ দারুল কেরাতের নামে যে
৩৩ একর জায়গা ওয়াক্ফ করে
গেছেন তা এতোদিন পরিবারের
সম্পদের সাথে থাকলেও
বর্তমানে আমরা তা টাস্ট্রের
অধীনে নিয়ে এসেছি।
পর্যায়ক্রমে এই জায়গা বিভিন্ন
প্রজেক্ট করা হবে। এর আয়
দিয়েই ব্যয়ভার বহন করা হবে।
ছাহেব কিবলাহ কুরআনের এই
খেদমতকে সর্বাগ্রে স্থান
দিতেন। এ হিসাবে আমরাও তার এ
খেদমতকে সকল খেদমতের
উর্দ্ধে স্থান দেই। দারুল
কেরাতের এ খেদমতকে প্রসারিত
করতে যা যা লাগবে আমরা সব
পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আল্লামা
ফুলতলী রহ. এর অনুপস্থিতিতেও
দারুল কিরাত তাঁর দেখানো পথেই
সুশৃঙ্খলভাবে সুচারুরুপে পরিচালিত
হচ্ছে মহান কুরআন শরীফের
বিশাল খেদমত। আল্লাহ আমাদের
এই খেদমতের উসিলায় দুনিয়া
ও আখিরাতের কল্যাণ দান করুণ।
 
Top