তালামীয নিউজ২৪ ::সালাতুত তারাবীহ অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ
একটি নামায। রামাদান মাসে ইশার নামাযের
পর জামাআতে এ নামায আদায় করা হয়।
এটি সুন্নতে মুআক্্কাদাহ। তারাবীহ
( ﺗﺮﺍﻭﻳﺢ ) শব্দটি তারবীহাতুন ( ﺗﺮﻭﻳﺤﺔ )
শব্দের কহুবচন। ﺗﺮﻭﻳﺤﺔ শব্দের অর্থ
হলো একবার বিশ্রাম নেয়া। রাসূলে পাক
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামা সিয়াম তথা
রোযা ও তারাবীহকে গুনাহ মাফের
মাধ্যম বলে উল্লেখ করেছেন।
যেমন, হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻟِﺮَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻣَﻪُ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ
ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ
-আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মাহে রামাদ্বান
সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি
ঈমানের সাথে, সওয়াবের প্রত্যাশায় এ
মাসে রাত্রিজাগরণ করে তার পূর্বেকার
সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
(বুখারী, ﺑَﺎﺏُ ﻓَﻀْﻞِ ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
হাদীস নং-২০০৮)
তারাবীহ নামাযের সূচনা :
তারাবীহ নামায রাসূল (সা.)-এর যামানাতেই
শুরু হয়েছে। বুখারী শরীফে
আছে, হযরত আয়িশা (রা.) থেকে
বর্ণিত, নবী করীম (সা.) রামাদ্বান
মাসের এক রাতে মসজিদে গমন করে
নামায (তারাবীহ’র নামায) পড়লেন এবং
অনেক সাহাবীও তাঁর সাথে নামাযে
শামিল হলেন। সকালে সাহাবায়ে কিরাম এ
বিষয়ে আলোচনা করলেন। ফলে
পরবর্তী রাতে আরো অধিক সংখ্যক
সাহাবী জমায়েত হলেন। তখন রাসূলে
পাক (সা.) নামায আদায় করলেন, উপস্থিত
সাহাবীগণও তাঁর সাথে নামায পড়লেন।
এ দিনও সকাল হলে তারা এ বিষয়ে
আলাপ-আলোচনা করলেন। ফলে
তৃতীয় রাতে মুসল্লির সংখ্যা আরো
বৃদ্ধি পেল। ঐ রাতে রাসূল (সা.) নামায
আদায় করলেন, তার সাথে সাহাবায়ে
কিরামও নামায পড়লেন। চতুর্থ রাতে
মুসল্লির সংখ্যা মসজিদের ধারণ ক্ষমতার
চেয়ে বেশী হয়ে গেল। কিন্তু
রাসূল (সা.) ফজরের নামাযের আগে
মসজিদে আসলেন না। ফজরের নামায
শেষে তিনি মুসল্লিদের দিকে
ফিরলেন, আল্লাহর ওয়াহদানিয়াত ও আপন
রিসালতের সাক্ষ্য দিলেন, অতঃপর
বললেন, (হে আমার সাহাবীরা!)
তোমাদের অবস্থা আমার নিকট
গোপন ছিল না । তবে এ নামায
তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবে
অতঃপর তোমরা তা আদায় করতে
পারবে না এ আশঙ্কায় আমি তোমাদের
কাছে আসিনি। (বুখারী, বাব- ﺑﺎﺏ ﻓﻀﻞ
ﻣﻦ ﻗﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ হাদীস নং ২০১২)
উক্ত হাদীস থেকে জানা গেল যে,
রাসূল (সা.) তারাবীহর নামাযকে অত্যন্ত
গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু উম্মতের
উপর ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চতুর্থ
রাতে তিনি মসজিদে আসেননি। ফলে
তৃতীয় রাতের পর উক্ত নামায জামাআত
সহকারে আদায় হয়নি। উক্ত হাদীসের
শেষে এ বর্ণনাও আছে যে, রাসূল
(সা.)-এর ইন্তিকাল পর্যন্ত তারাবীহর
নামাযের বিষয়টি এমনই ছিল।
অন্য হাদীসে আছে, হযরত আবূ
বকর (রা.)-এর পূর্ণ খিলাফতকাল ও ওমর
(রা.)-এর খিলাফতের প্রথম দিক পর্যন্ত
বিষয়টি এমনই ছিল। অর্থাৎ প্রত্যেকে
একাকী তারাবীহ আদায় করতেন। অথবা
ছোট ছোট জামাআতে আদায়
করতেন। অতঃপর হযরত ওমর ফারুক (রা.)
তাঁর খিলাফতকালে একদা মসজিদে গিয়ে
দেখতে পান যে, মসজিদের বিভিন্ন
স্থানে ছোট ছোট জামাআত হচ্ছে।
তখন তিনি মনে করেন সকল
মুসল্লিকে এক ইমামের পিছনে
একত্রিত করা উচিত। এ বিবেচনা
থেকেই তিনি এক ইমামের অধীনে
বিশ রাকাআত তারাবীহ জামাআতে
আদায়ের ব্যবস্থা করেন। এ
সম্পর্কে বুখারী শরীফে আছে,
ইবনে শিহাব যুহরী উরওয়া ইবনুয যুবায়র
থেকে, তিনি আবদুর রহমান ইবনে
আবদুল কারী থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেন, একদা রামাদ্বানের রাতে
আমি ওমর (রা.)-এর সাথে মসজিদে
গেলাম। তখন মানুষেরা পৃথক পৃথক
দলে বিভক্ত ছিল। কোন ব্যক্তি নিজে
নামায আদায় করছিলেন এবং তার সাথে
একটি দল নামায পড়ছিল। তখন ওমর (রা.)
বললেন, আমি মনে করি এ সকল
লোককে একজন ইমামের অধীনে
একত্রিত করতে পারলে ভাল হবে।
অতঃপর তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন
এবং তাদেরকে উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-
এর অধীনে (ইমামতিতে) একত্রিত
করে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন,
অন্য একদিন আমি আবার ওমর (রা.)-এর
সাথে বের হলাম। তখন লোকেরা
তাদের ইমামের সাথে নামায আদায়
করছিলেন। তা দেখে ওমর (রা.)
বললেন, ﻧِﻌْﻢَ ﺍﻟْﺒِﺪْﻋَﺔُ ﻫَﺬِﻩِ অর্থাৎ এটা
কতই না সুন্দর আবিস্কার। (বুখারী, বাব-
ﺑﺎﺏ ﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﻗﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ হাদীস নং
২০১০)
তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত:
তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত ও তা
সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। সাহাবায়ে কিরাম
(রা.)-এর যুগ থেকে তারাবীহ’র নামায
বিশ রাকাআত হিসেবেই পালিত হয়ে
আসছে। তাবিঈন ও তাবে তাবিঈনের যুগ
এবং পরবর্তী কোন যুগে এর
ব্যত্যয় ঘটেনি। চার মাযহাবের
প্রত্যেক ইমাম থেকে তারাবীহর
নামায বিশ রাকাআত বলেছেন। বিশ
রাকাআতের কম কেউ বলেননি। এমনকি
ইমাম মালিক (র.) থেকে এক বর্ণনায়
তিন রাকাআত বিতরসহ তারাবীহর নামায ৩৯
রাকাআত এবং অন্য বর্ণনায় একচল্লিশ
রাকাআত বলে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম
মালিক (র.)-এর অন্য বর্ণনা জমহুরের
অনুরূপ, অর্থাৎ তারাবীহর নামায বিশ
রাকাআত।
ইমাম নববী (র.) বলেন,
ﺇﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﺳﻨﺔ ﺑﺎﺗﻔﺎﻕ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ
، ﻭﻫﻲ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ، ﻳﺴﻠﻢ ﻣﻦ ﻛﻞ
ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ، ﻭﺻﻔﺔ ﻧﻔﺲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻛﺼﻔﺔ ﺑﺎﻗﻲ
ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ.
-জেনে রাখো, উলামায়ে কিরামের
ঐকমত্যে তারাবীহর নামায সুন্নত। আর
এটি বিশ রাকাআত। প্রত্যেক দুই
রাকাআতে সালাম ফিরাবে। আর এ
নামাযের পদ্ধতি অন্যান্য নামাযের
মতোই।
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম মালিক (র.)
থেকে বিশ রাকাতের অধিক যে বর্ণনা
পাওয়া যায় তাতে অতিরিক্ত রাকাআতসমূহ
মূলত তারাবীহ নয়। মক্কার অধিবাসীগণ
চার রাকাআত তারাবীহ পড়ে একবার
তাওয়াফ করতেন। এর পরিবর্তে
মদীনাবাসীগণ চার রাকাআত করে
অতিরিক্ত নামায পড়তেন। ফলে বিতরসহ
তাদের নামায ৩৯ রাকাআত হয়ে যেত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশ রাকাআত তারাবীহ
আদায় করেছেন:
বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে,
রাসূলুল্লাহ (সা.) তিন রাত জামাআতে
তারাবীহ আদায় করেছেন। তবে এসব
হাদীসে রাকাআত সংখ্যা উল্লেখ
নেই। হযরত ইবনে হাজার আসকালানী
(র.) ‘আত তালখীস’-এর মধ্যে
উল্লেখ করেছেন, হযরত ইবনে
আব্বাস (রা.)-এর এক বর্ণনায় আছে
রাসূলুল্লাহ (সা.) একাকী বিশ রাকাআত
তারাবীহ আদায় করতেন।
উক্ত হাদীসের সনদের মধ্যে কিছুটা
দুর্বলতা রয়েছে। সূতরাং নিশ্চিতভাবে
এটি বলা যাবে না যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশ
রাকাআত তারাবীহ আদায় করেছেন।
তবে বিশ রাকাআত তারাবীহ’র উপর
সাহাবায়ে কিরাম আমল করেছেন এবং
মুসলিম উম্মাহও এটি গ্রহণ করেছেন।
তারাবীহ নামাযের রাকাআত নিয়ে বিভ্রান্তি
:
হযরত উমর ফারুক (রা.)-এর যুগ থেকে
মুক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারাসহ
দুনিয়ার মুসলমানগণ শত শত বছর ধরে
তারাবীহর নামায বিশ রাকাআতই আদায়
করে আসছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে
আহলে হাদীস ও সালাফী নামধারী
গায়র মুকাল্লিদগণ (লা-মাযহাবীরা) তারাবীহ
নামাযের রাকাআত নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি
করছে। হিজরী তের শতকের
শেষদিকে (১২৮৫ হিজরীতে) ভারত
উপমহাদেশে মাযহাব অস্বীকারকারী
গায়র মুকাল্লিদ আলিম মুফতী মুহাম্মদ
হুসাইন বিটালভী এ বিভ্রান্তি শুরু করেন।
তিনি ফতওয়া প্রদান করেন যে, আট
রাকাআত তারাবীহ পড়া সুন্নাত, বিশ রাকাআত
পড়া বিদআত। আরববিশ্বে এ ফিতনা শুরু
হয় আরো অনেক পরে।
আরববিশ্বে সর্বপ্রথম এ ফিতনাকে
দলীল দ্বারা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ
চেষ্টা করেন শায়খ নাসীব রেফাঈ।
সমকালীন আলিমগণ তার মতামতকে
খন্ডন করেন। এর পরবর্তীতে
১৩৭৭ হিজরী সনে শায়খ নাসির
উদ্দীন আলবানী ‘তাসদীদুল ইসাবাহ’
নামক একটি বইয়ের মাধ্যমে এ বিষয়
প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও তিনি তার
মতের স্বপক্ষে কোন সাহাবী,
তাবিঈ বা কোন ফকীহ ইমাম অথবা
কোন মুহাদ্দিস ইমামের বক্তব্য
উপস্থাপন করতে পারেননি, যিনি বিশ
রাকাআত তারাবীহর ব্যাপারে আপত্তি
করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে
মনগড়াভাবে বলে দিয়েছেন যে,
ইমাম মালিক (র.) নাকি বিশ রাকাআত তারাবীহ
পড়তে নিষেধ করেছেন।
তারাবীহ নামাযের রাকাআত নিয়ে
সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈনের বর্ণনা :
পূর্বে উল্লেখিত সহীহ বুখারীর
বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে, হযরত
ওমর (রা.) নিয়মিতভাবে জামাআতে
তারাবীহর নামায আদায়ের ব্যবস্থা
করেছেন। কিন্তু এ হাদীসে রাকাআত
সংখ্যা উল্লেখিত নেই। তবে সাহাবায়ে
কিরাম ও তাবিঈনে ইযামের বিভিন্ন বর্ণনায়
বিশ রাকাতের কথা সুষ্পষ্টভাবে
উল্লেখ আছে। যারা তারাবীহ নামাযের
রাকাআত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়
তাদের জবাব হিসেবে এসকল বর্ণনাই
যথেষ্ট। নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু বর্ণনা
উপস্থাপন করা হলো।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺼﻠﻲ
ﻓﻲ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﻲ ﻏﻴﺮ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ
ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ
-নবী করীম (সা.) রামাদ্বান মাসে
একাকী বিশ রাকাআত তারাবীহ ও বিতর
আদায় করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে
আবি শায়বাহ : ২/২২২)
হযরত ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফা (র.)
বলেন, সাইব ইবনে ইয়াযীদ (রা.)
বলেছেন,
ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ
ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻓِﻰ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ
ﺭَﻛْﻌَﺔً - ﻗَﺎﻝَ - ﻭَﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﺑِﺎﻟْﻤِﺌِﻴﻦِ ،
ﻭَﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﺘَﻮَﻛَّﺌُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﻋُﺼِﻴِّﻬِﻢْ ﻓِﻰ ﻋَﻬْﺪِ
ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦِ ﻋَﻔَّﺎﻥَ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻣِﻦْ ﺷِﺪَّﺓِ
ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻡِ .
-তাঁরা (সাহাবা ও তাবিঈন) ওমর ইবনুল খাত্তাব
(রা.)-এর যামানায় রামাদ্বান মাসে বিশ
রাকাআত নামায (তারাবীহ) পড়তেন। তিনি
আরো বলেন, তারা নামাযে শতাধিক
আয়াতবিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তেন এবং ওসমান
ইবনে আফফান (রা.)-এর যুগে দীর্ঘ
নামাযের কারণে তারা (কেউ কেউ)
তাদের লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।
(সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী : ২/৪৯৬)
বিখ্যাত তাবিঈ আবূ আবদুর রহমান আস
সুলামী (রা.) বলেন,
ﺃَﻥَّ ﻋَﻠِﻴﺎ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺩَﻋَﺎ ﺍﻟْﻘُﺮَّﺍﺀَ ﻓِﻰ
ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ، ﻓَﺄَﻣَﺮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺭَﺟُﻼً ﻳُﺼَﻠِّﻰ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ
ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً . ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠِﻰٌّ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻋَﻨْﻪُ ﻳُﻮﺗِﺮُ ﺑِﻬِﻢْ .
হযরত আলী (রা.) (তাঁর খিলাফতকালে)
রামাদ্বানে কারীগণকে ডাকেন এবং
তাদের একজনকে আদেশ করেন
তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ
রাকাআত নামায পড়েন। আর আলী (রা.)
তাদেরকে নিয়ে বিতর পড়তেন।
(সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী : ২/৪৯৬)
এ আলোচনা থেকে প্রমাণ হয় যে,
তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত। অধিকন্তু
বিশ রাকাআত তারাবীহ খুলাফায়ে
রাশিদীনের সুন্নাত। আর তাঁদের
সুন্নাতকে আকঢ়ে ধরার জন্য স্বয়ং
রাসূলে পাক (সা.) নির্দেশ প্রদান
করেছেন। যেমন, তিনি ইরশাদ করেন,
ﻣﻦ ﻳﻌﺶ ﻣﻨﻜﻢ ﺑﻌﺪﻯ ﻓﺴﻴﺮﻯ ﺍﺧﺘﻼﻓﺎ
ﻛﺜﻴﺮﺍ ، ﻓﻌﻠﻴﻜﻢ ﺑﺴﻨﺘﻰ ﻭﺳﻨﺔ ﺍﻟﺨﻠﻔﺎﺀ
ﺍﻟﻤﻬﺪﻳﻴﻦ ﺍﻟﺮﺍﺷﺪﻳﻦ ﺗﻤﺴﻜﻮﺍ ﺑﻬﺎ ﻭﻋﻀﻮﺍ
ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺑﺎﻟﻨﻮﺍﺟﺬ
-তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে
বেঁচে থাকবে তোমরা অনেক
ইখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন
তোমরা আমার সুন্নাহ ও হেদায়াতপ্রাপ্ত
খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাহ আঁকড়ে
ধরবে। তোমরা তা আঁকড়ে ধরবে এবং
মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে ধরে
রাখবে। (সুনানে আবি দাউদ, বাব ﺑﺎﺏ ﻓِﻰ
ﻟُﺰُﻭﻡِ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔِ হাদীস নং ৪৬০৯)
বিশ রাকাআত তারাবীহ-এর উপর সাহাবায়ে
কিরামের ও সালফে সালিহীনের ইজমা:
হযরত ওমর (রা.)-এর সময় থেকে শুরু
করে পরবর্তী সময়ে সাহাবায়ে কিরাম,
তাবিঈন, তাবে তাবিঈন সকলেই তারাবীহর
নামায বিশ রাকাআতই আদায় করেছেন। এ
বিষয়ে কেউ কোন দ্বিমত পোষণ
করেননি। এ বিষয়ে আমলগত দিক
থেকে সাহাবায়ে কিরাম ও সালফে
সালিহীনের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তারাবীহ’র নামায বিষয়ে ইমাম আহমদ
(র.)-এর মত আলোচনা করতে গিয়ে
ইমাম ইবনে কুদামা বলেন, “ইমাম আহমদ
(র.)-এর কাছে পছন্দনীয় আমল
হলো বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়া। ইমাম
সুফিয়ান সাওরী (র.)ও তাই বলেন।
তাদের দলীল এই যে, হযরত ওমর
(রা.) যখন উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর
পেছনে সাহাবায়ে কিরামকে একত্র
করেছেন তখন তারা বিশ রাকাআত
তারাবীহ পড়েছেন। তাছাড়া হযরত
ইয়াযীদ ইবনে রূমান ও হযরত আলী
(রা.)-এর হাদীস থেকেও ইমাম আহমদ
(র.) দলীল গ্রহণ করেছেন। ইবনে
কুদামা বলেন, এটা মূলত: সাহাবায়ে
কিরামের ইজমাকেই প্রকাশ করে। আর
সাহাবায়ে কিরাম যে বিষয়কে অবলম্বন
করেছেন তা-ই গ্রহণীয় ও
অনুসরণীয়।” (আল মুগনী)
বিশিষ্ট তাবিঈ হযরত আতা (র.) বলেন,
আমি সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-কে রামাদ্বানে
বিশ রাকাআত তারাবীহ এবং তিন রাকাআত
বিতর পড়তে দেখেছি। (মুসান্নাফে
ইবনে আবি শায়বাহ : ২/২৮৫, মারওয়াযী,
কিয়ামুল লাইল, পৃষ্ঠা-৫৭)আবদুল আযীয
ইবনে রাফীঈ (রা.) বলেন, উবাই
ইবনে কা’ব (রা.) রামাদ্বান মাসে মদীনায়
লোকদের অর্থাৎ সাহাবায়ে কিরাম ও
তাবিঈনকে নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ
ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ : ২/২৮৫)
ইমাম নববী (র.) বলেন, তারাবীহ নামায
সুন্নাত হওয়ার বিষয়ে সকল আলিম
একমত। এ নামায বিশ রাকাআত, যার প্রতি দুই
রাকাআতে সালাম ফিরাতে হয়। (আল
আয্্কার : ৮৩)
ইবনে তাইমিয়া (র.)-এর দৃষ্টিতে বিশ
রাকাআত তারাবীহ সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত:
লা-মাযহাবীদের মান্যবর শায়খ ইবনে
তায়মিয়া লিখেছেন :“যখন উমর (রা.)
লোকদেরকে উবাই ইবনে কা’ব
(রা.)-এর পিছনে একত্রিত করে দিলেন
তখন তিনি বিশ রাকাআত তারাবীহ ও বিতর
পড়তেন। (আল-ফাতওয়া আল মিসরিয়্যা)
তারাবীহ’র বিষয়ে ওমর (রা.)-এর
সিদ্ধান্ত অর্থাৎ জামাআতবদ্ধভাবে বিশ
রাকাআত তারাবীহ পড়াকে সুন্নত
বলেছেন। তিনি হযরত ওমর (রা.)-এর এ
কাজকে সুন্নত বলেছেন। তিনি
লিখেছেন : “হযরত উমর (রা.) সকল
সাহাবীকে উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর
পিছনে এক জামাতে একত্রিত
করেছেন। বলাবাহুল্য, উমর (রা.)
খুলাফায়ে রাশেদীনের অন্তর্ভূক্ত
ছিলেন, যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ﻓﻌﻠﻴﻜﻢ ﺑﺴﻨﺘﻰ ﻭﺳﻨﺔ ﺍﻟﺨﻠﻔﺎﺀ
ﺍﻟﻤﻬﺪﻳﻴﻦ ﺍﻟﺮﺍﺷﺪﻳﻦ ﺗﻤﺴﻜﻮﺍ ﺑﻬﺎ ﻭﻋﻀﻮﺍ
ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺑﺎﻟﻨﻮﺍﺟﺬ অর্থাৎ ‘আমার সুন্নাহ ও
আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের
সুন্নাহকে অবলম্বন করবে এবং মাড়ির
দাঁত দিয়ে কামড়ে রাখবে।’ মাড়ির দাতের
কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এজন্য বলেছেন যে, এভাবে
ধারণ করলে তা মজবুত হয়ে থাকে।
তারাবীহ বিষয়ে উমর (রা.)-এর এই কাজ
সুন্নাহর অন্তর্ভূক্ত।” (ফাতাওয়া ইবনে
তাইমিয়া)
ইবনে তায়মিয়া যেখানে ওমর (রা.)-এর
কাজকে সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত বলছেন
সেখানে আধুনিক লা-মাযহাবীরা কিভাবে
এটাকে বিদআত বলে?
বিশ রাকাআত তারাবীহ বিদআত নয়:
সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন, তাবে তাবিঈন,
আইম্মায়ে মুজতাহিদীনসহ অন্যান্য
উলামায়ে কিরামের বক্তব্য পর্যালোচনা
করলে আমরা দেখতে পাব যে, তারা
সকলেই তারাবীহর নামাযকে রাসূলে
পাক (সা.)-এর সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত
করেছেন। আর বিশ রাকাআত তারাবীহ
জামাআতে আদায় করা খুলাফায়ে
রাশিদীনের সুন্নাত, ইজমায়ে সাহাবা ও
ইজমায়ে উম্মাহ হিসেবে গণ্য
করেছেন। যদি তারাবীহর নামায সুন্নাত
না হতো কিংবা বিশ রাকাআত আদায় করা
বিদআত হতো তা হলে সর্বপ্রথম
সাহাবায়ে কিরাম এর উপর আমল করতেন
না।
সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ
হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনা ও ইতিহাস
থেকে প্রমাণিত হয় যে, মসজিদে
নববীতে হিজরী ১৪ সন থেকে
হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর
ইমামতিতে জামাআতে তারাবীহ পড়া শুরু
হয়। এ সময় বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়া
হতো। ঐ জামাআতের মুক্তাদি ছিলেন
রাসূলে পাক (সা.)-এর আদর্শে গড়া
মুহাজির, আনসার ও অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম
(রা.)। যারা কোনো দিন কোনো
মিথ্যার সাথে আপস করেননি। যদি বিশ
রাকাআত তারাবীহ বিদআত হতো তাহলে
তারা এর প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করতেন।
কিন্তু কেউই এ বিষয়ে কোন প্রতিবাদ
করেন নি। বরং সকলে অত্যন্ত আগ্রহ
নিয়ে এ জামাআতে শামিল হতেন। সূতরাং
তারাবীহর নামায আট রাকাআত সুন্নাত বলা
এবং বিশ রাকাআতকে বিদআত বলা
সুন্নাতে খুলাফা, ইজমায়ে সাহাবা ও
ইজমায়ে উম্মাহর বিরোধিতার শামিল। বরং
দলীল-প্রমাণের আলোকে বলতে
হবে, যারা তারাবীহর নামায আট রাকাআত
বলছেন তারা সমাজে বিভ্রান্তি
ছড়াচ্ছেন।
আট রাকাআতের দলীল ও কিছু কথা:
যারা তারাবীহর নামায আট রাকাআত বলে
থাকেন তারা বুখারী শরীফে হযরত
আয়িশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস দিয়ে
দলীল প্রদান করে থাকেন। হাদীসটি
হলো এই :
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﺄَﻝَ
ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻛَﻴْﻒَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺻَﻠَﺎﺓُ
ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ
ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﻟَﺎ
ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺣْﺪَﻯ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻳُﺼَﻠِّﻲ
ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺴَﻞْ ﻋَﻦْ ﺣُﺴْﻨِﻬِﻦَّ ﻭَﻃُﻮﻟِﻬِﻦَّ ﺛُﻢَّ
ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺴَﻞْ ﻋَﻦْ ﺣُﺴْﻨِﻬِﻦَّ ﻭَﻃُﻮﻟِﻬِﻦَّ
ﺛُﻢَّ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺗَﻨَﺎﻡُ
ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﻮﺗِﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﺇِﻥَّ ﻋَﻴْﻨَﻲَّ
ﺗَﻨَﺎﻣَﺎﻥِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻨَﺎﻡُ ﻗَﻠْﺒِﻲ
-হযরত আবূ সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত
যে তিনি হযরত আয়িশা (রা.)-কে প্রশ্ন
করেছিলেন, রামাদ্বান মাসে রাসূলে
পাক (সা.)-এর নামায কেমন ছিল? আয়িশা
(রা.) উত্তরে বলেন, রাসূল (সা.)
রামাদ্বান ও অন্য মাসে এসার রাকাআতের
বেশী পড়তেন না। তিনি চার রাকাআত
নামায পড়তেন। তুমি এর দীর্ঘতা ও
সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রশ্ন করো না
(কারণ, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়)।
অতঃপর তিনি আরো চার রাকাআত নামায
পড়তেন। তুমি এরও দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য
সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। এরপর তিনি
তিন রাকাআত নামায পড়তেন। আয়িশা (রা.)
রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছেন, ইয়া
রাসূল্লাহ! আপনি কি বিতর পড়ার আগে
ঘুমাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বলেছেন,
হে আয়িশা! আমার চোখ ঘুমায় কিন্তু
অন্তর ঘুমায় না। (সহীহ বুখারী, হাদীস
নং ২০১৩)
গায়র মুকাল্লিদগণ ৮ রাকাআত তারাবীহকে
সুন্নাত প্রমাণ করার জন্য উল্লেখিত
হাদীসকে দৃঢ়তার সাথে উপস্থাপন
করেন এবং তারাবীহর নামায ২০ রাকাআত
সম্পর্কিত সকল হাদীসকে এর সাথে
বিরোধপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করেন।
অথচ লক্ষণীয় বিষয় হলো :
প্রথমত: এ হাদীস তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত,
তারাবীহ সম্পর্কিত নয় যার অনেক
প্রমাণ রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে
বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, স্বয়ং
গায়র মুকাল্লিদগণই এর উপর আমল
করছেন না। বরং তারা তারা এর বিরোধিতা
করছেন। যেমন :
১. এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে,
রাসূল (সা.) চার রাকাআত করে নামাজ
পড়তেন অথচ গায়র মুকাল্লিদগণ
দু’রাকআত করে পড়েন।
২. এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একা একা
নামায পড়তেন। কিন্তু গায়র মুকাল্লিদগণ
পুরো রামাদ্বান মাস জামাআতের সাথে
তারাবীহ পড়েন।
৩. উক্ত হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়
যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এ নামায ঘরে পড়তেন। এ হাদীসে
আছে, হযরত আয়শা (রা.) রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে
প্রশ্ন করেছিলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি কি
বিতর না পড়েই ঘুমাবেন? রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে
বলেছিলেন- হে আয়শা, আমার
চোখগুলো ঘুমালেও অন্তর ঘুমায় না।
এরূপ প্রশ্নোত্তর থেকে বুঝা যায়
বিষযটি ঘরের বিষয় ছিল, কারণ, সফরের
অবস্থায় না হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ঘরেই ঘুমাতেন। অথচ গায়র
মুকাল্লিদগণ সারা রামাদ্বান মাস ঘরের
বদলে মসজিদেই এ নামায পড়ে
থাকেন।
৪. এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে,
রাসূল (সা.) নামায পড়ে ঘুমিয়ে
যেতেন। ঘুম থেকে উঠে বিতর
পড়তেন। অথচ গায়র মুকাল্লিদগণ
তারাবীহর সাথে সাথে ঘুমানোর
পূর্বেই বিতর আদায় করে নেন।
৫. এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে,
রাসূল (সা.) একা একা বিতর আদায় করতেন,
অথচ গায়র মুকাল্লিদগণ জামাআতের
সাথে বিতর আদায় করেন।
৬. এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে,
রাসূল (সা.) সারা বছর বিতর নামায এক
সালামে তিন রাকাআত পড়তেন, কিন্তু
গায়র মুকাল্লিদগণ বেশির ভাগ সময়ে
এক রাকআত বিতর পড়েন। কখনো তিন
রাকাআত পড়লে তা দু’সালামে পড়েন।
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ এক নামায নয়:
লা-মাযহাবীগণ বলে থাকেন, তারাবীহ
ও তাহাজ্জুদ নামায এক। তাদের এ
বক্তব্যও সঠিক নয়। কেননা রাসূলে পাক
(সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে
তারাবীহ প্রথম রাতে ও তাহাজ্জুদ শেষ
রাতে পড়া হতো। যেমন তিরমিযী
শরীফে হযরত আবূ যর (রা.) থেকে
বর্ণিত একটি হাদীস থেকে প্রমাণিত
হয় যে রাসূল (সা.) রাতের প্রথমভাগে
তারাবীহ পড়েছেন। এ হাদীসে
রামাদ্বানের ২৩, ২৫ ও ২৭ তম রাতে
দীর্ঘ সময় নিয়ে তারাবীহ পড়ার বর্ণনা
এসেছে। ২৩তম রাতে তারাবীর
নামাযে রাতের এক তৃতীয়াংশ ও ২৫তম
রাতে রাতের অর্ধাংশ অতিবাহিত হয়। আর
২৭ তম রাতে এমন দীর্ঘ সময় নিয়ে
রাসূল (সা.) তারাবীহর নামায পড়লেন
যাতে সাহাবায়ে কিরাম সেহরীর সময়
চলে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। এ
তিন রাতের সমন্বিত বর্ণনা প্রমাণ করে
যে, তারাবীহর নামায রাতের
প্রথমভাগের নামায। আর তাহাজ্জুদ যে
শেষ রাতের নামায তা সর্বজন
স্বীকৃত।
তাছাড়া সাহাবায়ে কিরাম (রা.) রাসূল (সা.)-এর
আমল সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত
ছিলেন। হাদীস শরীফের অর্থ ও
মর্ম তারাই বেশী জানতেন ও
বুঝতেন। তারা উপরোক্ত আয়িশা (রা.)-
এর হাদীসকে তাহাজ্জুদের বিবরণ
হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তারাবীহ’র
বিবরণ হিসেবে নয়। যদি এ হাদীস
তারাবীহ প্রসঙ্গে হত তাহলে
সাহাবায়ে কিরাম তারাবীহ আট রাকাআতই
পড়তেন, বিশ রাকাআত পড়তেন না। এ
হাদীস থেকে এ বিষয়টিও ষ্পষ্ট হয়
যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ হলো ভিন্ন।
যার ফলে আট রাকাআত তাহাজ্জুদের
হাদীস বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সাহাবায়ে
কিরাম তারাবীহ নামায বিশ রাকাআত
পড়তেন।
‘তারাবীহ আট রাকাতের বেশি পড়া
নাজায়িয’ এ বক্তব্যও সঠিক নয়:
গায়র মুকাল্লিদগণ বলে থাকেন তারাবীহ
নামায আট রাকাআতের চেয়ে বেশী
পড়া নাজায়িয বা বিদআত। আবার তারা তারাবীহ
ও তাহাজ্জুদকে এক বলে থাকেন।
অথচ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে,
তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য নির্ধারিত
কোনো রাকাআত সংখ্যা নেই। দুই
রাকাআত করে যত রাকাআত করে যত
রাকাআত ইচ্ছা পড়া যায়। তাছাড়া রাসূলে পাক
(সা.) আট রাকাআত পড়তেন বলে
পূর্বে যে বর্ণনা এসেছে তাও তাঁর
নিয়মিত আমল ছিল না। বরং আয়িশা (রা.)-এর
অন্য বর্ণনাতে ১৩ রাকাআতের
উল্লেখ রয়েছে। অন্য হাদীসে
আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন-
ﺃَﻭْﺗِﺮُﻭﺍ ﺑِﺨَﻤْﺲٍ ﺃَﻭْ ﺑِﺴَﺒْﻊٍ ﺃَﻭْ ﺑِﺘِﺴْﻊٍ ، ﺃَﻭْ
ﺑِﺈِﺣْﺪَﻯ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﺃَﻭْ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ গ্ধ.
-তোমরা বিতর পড় (তাহাজ্জুদসহ) পাঁচ
রাকাআত, সাত রাকাআত, নয় রাকাআত, এগার
রাকাআত অথবা এর চেয়ে বেশী।
(মুস্তাদরাকে হাকীম : ১/৪৪৬, আস
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী : ৩/৩১)
অতএব তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে এক
বললেও তারাবীহ নামায আট রাকাআত
প্রমাণিত হয় না।
কেউ কেউ বলে থাকেন যে, আট
রাকাআত তারাবীহর প্রবক্তা হলেন
ইবনে তায়মিয়া। এ কথাটিও সঠিক নয়।
কেননা ইবনে তায়মিয়া নির্ধারিত
কোনো রাকাআত সংখ্যার কথা
বলেননি। বরং ইবনে তায়মিয়া বলেছেন,
“কেউ যদি আবূ হানীফা, শাফিঈ ও আহমদ
(র.)-এর মাযহাব মতো বিশ রাকাআত আদায়
করে অথবা মালিক (র.)-এর মাযহাব মতো
ছয়ত্রিশ রাকাআত আদায় করে কিংবা তের
বা এগার রাকাআত আদায় করে তবে সে
ভাল করল।”(ইবনে তায়মিয়া, আল ফাতাওয়া
আল কুবরা : ১/১৭৬)
এ বিষয়ে ইবনে তায়মিয়ার আরো
বলেছেন : “সলফে সালিহীনের
একদল চল্লিশ রাকাআত তারাবীহ আদায়
করতেন। আর বিতর পড়তেন তিন
রাকাআত। আর অন্যরা আদায় করতেন ৩৬
রাকাআত, আর বিতর পড়তেন তিন
রাকাআত। এগুলো সবই জায়িয। এ
পদ্ধতিগুলোর যে কোনোটি
অবলম্বন করে কিয়ামে রামাদ্বান করা
হোক না কেন, তাই উত্তম। আর
সর্বোত্তম বিষয় মুসল্লিদের অবস্থার
কারণেও পরিবর্তিত হয়। যদি তাদের
মধ্যে দীর্ঘ কিয়ামের সামর্থ থাকে
তাহলে দশ রাকাআত ও পরবর্তী তিন
রাকাআত (বিতর) উত্তম। যেমন নবী
করীম (সা.) রামাদ্বানে এরূপ করতেন।
আর যদি এটা সম্ভব না হয় তা হলে বিশ
রাকাআত পড়াই উত্তম। অধিকাংশ মুসলমান
এর উপরই আমল করেন। কারণ এটা দশ
ও চল্লিশের মাঝামাঝি। আর যদি চল্লিশ
রাকাআত ইত্যাদি পড়ে তবে সেটাও
জায়িয। এর মধ্যে কোন একটি মাকরূহ
হবে না। এ বিষয়টি একাধিক ইমাম যেমন
ইমাম আহমদ প্রমুখ সুষ্পষ্ট ভাষায়
উল্লেখ করেছেন। (মাজমুআহ
ফতওয়ায়ে ইবনে তায়মিয়া : ২২/২৭২)
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে,
ইবনে তায়মিয়া আট রাকাআত তারাবীহর
কথা বলেননি এবং বিশ রাকাআতকে
বিদআতও বলেননি। বরং তিনি বলেছেন,
দীর্ঘ কিয়াম সম্ভব না হলে বিশ রাকাআত
পড়াই উত্তম এবং অধিকাংশ মুসলমান এর
উপরই আমল করেন।
শেষকথা :
তারাবীহর নামায সুন্নাত। এটি যেমন
সুন্নাতে রাসূল হিসাবে প্রমাণিত তেমনি
খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত
হিসেবেও সুপ্রতিষ্ঠিত। রাসূলে পাক
(সা.) নিজে বিশ রাকাআত তারাবীহ আদায়
করেছেন। তবে ফরজ হয়ে যাওয়ার
আশঙ্কায় তিনি পুরো রামাদ্বান পুরো
নামায মসজিদে জামাআতে আদায়
করেননি। রাসূল (সা.)-এর ইন্তিকালের পর
ফরযিয়্যাতের আশঙ্কা রহিত হয়ে
গেলে ওমর (রা.) উবাই ইবনে কা’ব
(রা.)-এর ইমামতিতে মসজিদে
নববীতে বিশ রাকাআত তারাবীহ
জামাআতে আদায়ের ব্যবস্থা করলে
সাহাবায়ে কিরাম (রা.) সকলে এতে শামিল
হন। তারা কেউই এর বিরোধিতা করেননি।
ওমর (রা.)-এর যুগ থেকে অদ্যাবধি
চৌদ্দশ বছরের অধিক সময় ধরে দুনিয়ার
সকল প্রান্তের মুসলমানগণ এর উপরই
আমল করে
 
Top