বাংলাদেশের সিমান্তবর্তী উপজেলার সবুজ শ্যামল গ্রামে নিরবের জন্ম তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে ৩য়। ইসলাম খুব শান্তশিষ্ট ও ভদ্র মেজাজের। সুন্দর গোলগাল চেহারার ইসলামকে গ্রামের সবাই খুব ভালো বাসে। সেই ছোট বেলা থেকেই ইসলামের প্রতি তার অতি আগ্রহ তারই ধারাবাহিকতায় যখন সে কৈশোরে তখন একটি ইসলামি দলে যোগ দেয়, দলের সকল নিয়ম কানুন মাসিক রুটিন পালন ও সিনিয়র ভাইদের পরামর্শে নিজের আমল আখলাক পরিবর্তন করে একজন ইসলামি খাটি সৈনিকের পরিচয় দেয়। পাড়ার অন্য ছেলেদের চাইতে নিরব ছিল সম্পুর্ন আলাদা।  তার বন্ধু বান্ধবরা যখন ফিলিম দেখা খেলাধুলা ও নাচ গান নিয়ে বাস্ত তখন নিরব লেখাপড়া খিদমতে খালক ও ইসলামি দাওয়াতি কাজে ব্যাস্ত থাকত। তার জন্য স্কুল ও গ্রামের সবাই তাকে খুব ভালোবাসত।  এভাবেই চলল কয়েক বছর, যখন সে কলেজে ডিগ্রীতে ভর্তি হল তখন তার অন্যরকম টান তৈরি হল বড় হবার স্বপ্ন দেখল কলেজে সবাই তাকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকবে এমন স্বপ্ন সহপাঠী বন্ধু  সাহেদ বলল সরকার দলে যোগ দিলে তোর সব স্বপ্ন তারাই পুরন করে দিবে, সাহেদের প্ররোচনায় নিরব যোগ দিল সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনে। নিরব ভদ্র ও শান্তশিষ্ট হওয়ায় গ্রামের এক ওয়ার্ড শাখার দায়িত্বও পেল।
কয়েক দিনের ব্যাবধানে নিরবের ইসলামি মন মানসিকতা পাল্টে গেল আগে যে সারাদিন কাটাতো ইসলামের খেদমতে এখন সে তার স্বপ্ন পুরনের জন্য বড় ভাইয়াদের সাথে সেলফি তুলা থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষকে কি ভাবে ঘায়েল করা যায় কিভাবে চাঁদাবাজি করা যায় কি ভাবে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করা যায় সেই কর্মকান্ডে ব্যাস্ত থাকে সারাদিন। আগে সকাল শুরু হত ফজরের নামাজ আর কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে এখন সেখানে সকাল শুরু হয় কাকে কিভাবে মারা যায় সেই চিন্তাতে।
সে যখন একা থাকে তখন বুঝতে পারে সব কিছু থেকেও যেন কিছুই নেই আগে যারা তাকে খুব ভালবাসত পথে ঘাটে পেলে হাসি মুখে সালাম দিয়ে কথাাবার্তা বলত এখন তারা কেউ তার দিকে ফিরেই থাকায় না। আগে আজান হলে নামাজে চলে যেত কিন্তু এখন কেউ আর তাকে নামাজে যেতে জোর করে না।
সে মনে মনে পণ করে সরকারি দলের মাধ্যমে একটা ভালো চাকরি পেলে এসব ছেড়ে দিয়ে আগের মত ভালো হয়ে যাবে
পরদিন কলেজে যেতেই নিজ দলের দু গ্রুপের সংঘর্ষ লেগে গেল চলল ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।  এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষকের একজন হকি ষ্টিক দিয়ে নিরবের মাথায় আঘাত করল নিরব মুহুর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, কলেজের মাঠে পড়ে রইল তার নিথর দেহখানি।  পুলিশ এসে লাশ পোস্ট মোর্টাম করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করল। বুক ভরা বড় হবার স্বপ্ন দিয়ে নিরব কবরে চলে গেল।
নিরবের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।  লোভে পড়ে দুনিয়া ও আখেরাত দুকুলই হারাল।

সে দিন সন্ধ্যায় দলের জেলা সভাপতি ও সম্পাদক সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এলো
'নিরব দলের কেউ ছিল না'।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন Blogger

 
Top