লিখেছেন,  মাওলানাঃ এম. আবুল কালাম (শিবলু)

নামাযের পর মুনাজাত সম্পর্কে নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ,,,,



عن معاذ بن جبل رض أن النبي صلی اللہ علیہ وسلم قال لہ أوصیک یا معاذ! لا تدعن أن تقول دبر کل صلاۃ، اللہم أعني علی ذکرک وشکرک وحسن عباد تک۰
(رواہ النساءي : ۱/۱۴۶، وأبو داود : ۱/۲۱۳ الحدیث ۱۵۲۲)
১। হযরত মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, হে মু’আয! আমি তোমাকে ওসীয়াত করছি যে, প্রত্যেক নামাযের পর এ দু’আ পড়াকে তুমি কখনো ছাড়বে না-হে আল্লাহ! আমাকে তোমার জিকির, শোকর এবং উত্তম ইবাদত করার জন্য সাহায্য কর।

(নাসাঈ শরীফ ১/১৪৬, আবু দাউদ শরীফ ১/২১৩ হাঃ নং ১৫২২)

عن أنس رض عن النبي صلی اللہ علیہ وسلم قال : قل بعد صلاۃ بعد ما ترفع یدک : اللہم إلہي إلہ إبراہیم۰

(ابن السني في عمل الیوم واللیلۃ : ۶۱ ضعیف ۱۳۸)

২। হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম তাকে নির্দেশ করেন যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর হাত উঠিয়ে এ দু’আ করবে হে আল্লাহ! যিনি আমার এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর মাবূদ। (ইবনুছ ছুন্নী ঃ ৬১)

عن أبي أمامۃ الباہلي قال قیل یا رسول اللہ! أي الدعاء أسمع؟ قال : جوف اللیل الأخر ودبر الصلوات المکتوبۃ۰ رواہ الترمذي : ۱/۰۸۷ وکذا۰

( وابن ماجۃ : ۹۳ الحدیث ۳۴۹۹)

৩। হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, কোন দু’আ কবূল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী? ইরশাদ হলো, শেষ রাত্রে (তাহাজ্জুদের পর) এবং ফরজ নামায সমূহের পরে।

(তিরমিযী শরীফ পৃঃ ১/৮৭ হাঃ নং ৩৪৯৯)

عن المطلب قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم : صلاۃ اللیل مثنی مثنی، وتشہد في کل رکعتین، وتبائس وتمسکن، وتقنع وتقول اللہم اغفر لي فمن لم یفعل ذلک فہو خداج۰

(رواہ ابن ماجۃ : ۹۳، ورواہ أیضا أبو داود : الحدیث ۱۲۹۶)

৪। হযরত মুত্তালিব (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “রাত্রের নামাযে দু-দু রাকাআতের পর বসবে, এবং প্রত্যেক দু রাকাআতের পর তাশাহহুদ পড়বে এবং নামাযের মধ্যে নিজের নিঃস্বতা এবং বিনয়ীভাব প্রকাশ করবে। তারপর নামায শেষে দু হাত উঠাবে এবং দু’আ করবে, হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দাও। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার নামায অসম্পন্ন থাকবে। (আবু দাউদ শরীফ ঃ ১/১৮৩, ইবনে মাজা শরীফ পৃঃ ৯৩ হাঃ নং ১২৯৬)

عن فضل بن عباس قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم الصلاۃ مثنی مثنی تشہد في کل رکعتین وتخشع وتضرع وتمسکن وتقنع یدیک یقول ترفعہما إلی ربک مستقبلا بطونہما وجہک وتقول : یارب! یا رب! فمن لم یفعل ذلک فہو کذا

(رواہ الترمدی الحدیث ۳۷۵)

৫। হযরত ফযল ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নামায দুই দুই রাক’আত; প্রত্যেক দুই রাক’আতে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে হয়। ভয়-ভক্তি সহকারে কাতরতার সহিত বিনত হয়ে নামায আদায় করতে হয়। আর (নামায শেষে) দু’হাত তুলবে এভাবে যে, উভয় হাত প্রভু পানে উঠিয়ে চেহারা কিবলামুখী করবে। অতঃপর বলবে-প্রভু হে! প্রভু হে! যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, সে অসম্পূর্ণ নামাযী। (তাঁর নামায অঙ্গহীন সাব্যস্থ হবে)।

(তিরমিযী শরীফ ঃ ১৮৭ হাঃ নং ৩৮৫)

عن عبد اللہ بن عباس رض قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم إذا فرغت من الدعاء فامسح بیدیک وجہک۰

(رواہ ابن ماجۃ : ۲۷۵، وأبو داود : ۱/۲۰۹ الحدیث ۱۴۹۲)

৬। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, দু’আ করার তরীকা হল যে তুমি উভয় হাত কাঁধ বরাবর তুলবে।(আবু দাউদ শরীফ ঃ ১/২০৯ )

عن ابن عباس أن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم قال : المسئلۃ أن ترفع یدیک حذو منکبیک۰

(رواہ أبو داود : ۱/۲۰۹ الحدیث ۱۴۸۹ صیحح)

৭। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, যখন তুমি দু’আ শেষ করবে তখন উভয় হাতকে চেহারার মধ্যে মুছবে।

(ইবনে মাজা ঃ ২৭৫ হাঃ নং ১৪৮৯)

عن سلمان رض قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم : ما رفع قوم أکفہم إلی اللہ تعالی یسألونہ شیئا إلا کان حقا علی اللہ أن یضع فی أیدیہم الذي سألوا۰

(رواہ الطبر انی في الکبیر : ۶/۲۵۴ الحدیث ۶۱۴۲)

৮। হযরত সালমান (রাঃ) বলেন, নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন জামাআত কিছু প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুললে আল্লাহ তাআলার উপর ওয়াজিব হয়ে যায় তাদের প্রার্থিত বস্তু তাদের হাতে তুলে দেয়া।

(তাবারানী কাবীর ঃ ৬/২৫৪ হাঃ নং ৬১৪২)

عن سلمان رض قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم : إن ربکم حي کریم یستحي أن یرفع العبد یدیہ فیردہما صفرا۰

(رواہ أبو داؤد عن سلمان ۱/۷۰۹ برقم ۱۴۸۸)

৯। হযরত আলী ইবনে আবী তালিব থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভূ অত্যন্ত লাজুক, এবং দয়ালু। কোন বান্দা তার হাত দুটি উঠিয়ে মুনাজাত করলে তার হাত খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন। (আবু দাউদ হাঃ নং ১৪৮৮)

ما من عبد مؤمن بسط کفیہ في دبر کل صلاۃ ثم بقول : اللہم إلہي ۰۰۰

(ابن السنی فی عمل الیوم ۱۳۸)

১০। হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেন, যে বান্দা প্রত্যেক নামাযের পর দু’হাত তুলে এ দু’আ পড়বে- “আল্লাহুম্মা ইলাহী ……… “আল্লাহু তা’আলা নিজের উপর নির্ধারিত করে নিবেন যে, তার হস্তদ্বয়কে বঞ্চিত ফেরত দিবেন না।

(ইবনুস সুন্নী হাঃ নং ১৩৮)

عن حبیب ابن مسلمۃ ۔۔۔ قال سمعت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم یقول : لا یجتمع ملأفیدعو بعضہم ویؤمن البعض إلا أجابہم اللہ ۔۔۔

(رواہ الحاکم فی مستدرکہ : ۳/۳۴۷ الحدیث ۵۴۷۸)

১১। হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন “যদি কিছু সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে এভাবে দু’আ করে যে, তাদের একজন দু’আ করতে থাকে, আর অপররা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে, তবে আল্লাহ তা’আলা তাদের দু’আ অবশ্যই কবুল করে থাকেন।’

(তালখীসুয যাহাবী, ৩ঃ৩৪৭ পৃঃ, মুস্তাদ্‌রাকে হাকেম ঃ হাঃ নং ৫৪৭৮)

عن ثوبان عن النبی صلی اللہ علیہ وسلم لا یحل لامرإ أن ینظر فی جوف بیت امرء حتی یستأذن، فإن نظر فقد دخل ولا یؤم قوما فیخص نفسہ بدعوۃ دونہم فإن فعل فقد خانہم ولا یقوم إلی الصلاۃ وہو حقن

(رواہ الترمذي : ۱/۸۲ الحدیث ۳۵۷)

১২। হযরত ছাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে খোদা সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দু’আতে কেবল নিজেকেই নির্দিষ্ট করে। যদি এরূপ করে, তবে সে তাদের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করল।”

(তিরমিযী শরীফ ঃ ১ঃ৮২ হাঃ নং ৩৫৭)

এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম সাহেব সকল মুসল্লীদের সঙ্গে নিয়ে সকলের জন্য দু’আ করবেন। নতুবা তিনি খিয়ানতকারী হবেন।

✅ উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা বুঝা যায়ঃ-

(ক) ফরজ নামাযের পর দু’আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা। তাই ফরজ নামাযের পর সকলের জন্য দু’আয় মশগুল হওয়া বাঞ্ছণীয়।

(খ) নামাযের পর হাত তুলে দু’আ করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নামাযের পর দু’আয় হাত উঠাতেন এবং মুনাজাত শেষে উভয় হাত চেহারার মধ্যে মুছতেন এবং অন্যদেরকে এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। সুতরাং এটাই দু’আর আদব। আর এ কথা তো হতেই পারে না যে, নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম নামাযের পর হাত তুলতেন কিন্তু সাহাবা (রাঃ) গণ নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করে হাত তুলতেন না।

(গ) একজন দু’আ করবে; আর অন্যরা সবাই আমীন বলবে; এভাবে সকলের দু’আ বা ‘সম্মিলিত মুনাজাত’ কবুল হওয়া অবশ্যম্ভাবী। আর ইমাম সাহেব শুধু নিজের জন্য দু’আ করবেন না। দু’আতে মুসল্লীদেরকে শামিল করবেন। নতুবা তিনি খিয়ানতকারী সাব্যস্ত হবেন।

(ঘ) উল্লেখিত হাদীস সমূহের সমষ্টিগত বর্ণনা দ্বারা নামাযের পর একাকী মুনাজাতের পাশাপাশি ফরজ নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের সম্মিলিত মুনাজাতের প্রমাণ দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। অতএব, তা মুস্তাহাব হওয়াই হাদীস সমূহের মর্ম ও সমষ্টিগত সার কথা।
 
Top