তালামীয নিউজ ২৪ঃ
 প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-
শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সমাজের নেতৃত্বস্থানীয়
ব্যক্তিদের নিয়ে জঙ্গিবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে
বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
‘সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আলিমদের ভূমিকা’ শীর্ষক
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃায় তিনি একথা
বলেন।
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আলোচনা
সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আইন দিয়ে, জোর করে,
কারো মন আটকিয়ে রাখা যাবে না। এ ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ
করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের
বাঁচাতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার সমন্বয়ে
জঙ্গিবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে এ
কাজ সম্ভব না। শিক্ষার্থীদের দেখে রাখার দায়িত্ব
অভিভাবকসহ সমাজের সবার। সবাই যদি সচেতন হয়
তাহলে কারো সন্তানই আর বিপথগামী হবে না।’
এসময় উপস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্দেশে
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যারা আজকে এখানে উপস্থিত
হয়েছেন, আপনারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে
আপনাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা
করবেন। জঙ্গিবাদ নির্মূলে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের
নির্দেশনার পাশপাশি নিজেদের ধ্যান-ধারণা কাজে
লাগাবেন। শিক্ষকরা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জঙ্গিবাদ
বিষয়ে সচেতনতা বাড়াবেন। ক্রমান্বয়ে সমাজে তা
ছড়িয়ে দিবেন। এ মুহূর্তে সবাইকে সচেতন করাই
আপনাদের কাজ।’
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে
তিনি বলেন, ‘উস্তাদ-শাগরেদের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য
সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যাতে কোনো বিপদ হলেই
শিক্ষার্থী তার শিক্ষকের নিকটে ছুটে যেতে পারে।
শিক্ষকদের জ্ঞানী-গুণীর পাশপাশি আদর্শবান হতে
হবে।’
যে সব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কুপথে পরিচালিত
করতে চায় তাদের চিহ্নিত করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার
জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এসময় পরিবারের ঐতিহ্যবাহী বন্ধনে শিক্ষার্থীদের
আকৃষ্ট করার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শও দেন
মন্ত্রী।
যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদে
জড়িয়েছে বলে প্রমাণ হয়েছে সে সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের উদ্দেশে তিনি বলেন,
‘বারবার আপনাদের বলা হয়েছে। আপনারা শোনেননি।
আজকে আপনাদের কারণেই আমাদের সন্তান
বিপথগামী।’
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ
করে আপনারাও বাঁচতে পারছেন না। কেউ জেনে-
শোনে -বুঝে তাদের সন্তান আপনাদের প্রতিষ্ঠানে
পড়তে পাঠাবে না।’
ইসলামী আরবি বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
মুহাম্মদ আহসান উল্লাহর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি
ছিলেন- শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন,
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এএস
মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বদ্যিালয়) মো. হেলাল
উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক
ড. মো. আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ মাদরাসা
বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম
ছায়েফ উল্লাহ, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন এবং জমিয়াতুল
মোদার্রেছিন বাংলাদেশের মহাসচিব শাব্বীর আহমদ
মোমতাজী। মুখ্য আলোচক ছিলেন- বাংলাদেশ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান
অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
স্বাগত বক্তব্যে আহসান উল্লাহ বলেন, ‘আজকের এ
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি পরিহার করে শিক্ষার্থীদের
স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষক-
শিক্ষার্থী-অভিভাবক পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গে
আলোচনা করতে হবে।’ শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর
নিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে একটি দলকে
গোয়ান্দা হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাবও দেন
তিনি।
শিক্ষক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন-
মোকামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান
ফেরদৌস এবং ফরিদাবাদ। আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ
ড. একেএম মাহবুবুর রহমান।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইসলাম-জিহাদ এবং জঙ্গিবাদ
এ তিনটি বিষয়ের ব্যাখ্যা সবার সামনে তুলে ধরতে
হবে। এ প্রয়োজনীয়তায় ইসলামে জিহাদের বিষয়ে কী
বলা আছে সে বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট করে তুলে
ধরতে পারলে জঙ্গি বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ এর
জন্য ইসলাম-জিহাদ এবং জঙ্গি এ ধারণাগুলোর ওপর
একটি বই বের করা অপরিহার্য বলে মনে করেন তিনি।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন- ইসলামী আরবি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও আনজুমানে আল ইসলাহ এর মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা হুসাম উদ্দিন চৌধরী ফুলতলী
তিনি বলেন, ‘ভণ্ডপীরদের নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ
ভণ্ডপীরেরা ভণ্ডামী, অসামাজিক, অনৈতিক
কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। তাদের থেকে মানুষ ইসলামের ভুল
ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ শিখে। সুতারাং ভণ্ড
আক্বিদাধারী, ভণ্ডপীরদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পিস টিভি বন্ধ হয়েছে, শুধু তাতে
হবে না, পিস টিভির বক্তাদেরও গ্রেপ্তার করতে
হবে।’
গুলশানের হোলি আটির্সান রেস্তোরাঁয় হামলাকারী
নিবরাসের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,
‘নিবরাসরা ইসলাম পড়েনি, বুঝেওনি। তারা এসব
বক্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শর্টকার্টে কথিত
জান্নাতে যাওয়ার জন্য বিপথগামী হয়েছে।’
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জঙ্গিবাদবিরোধী
সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজ এ
মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে প্রাইভেট
বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয় অধীভুক্ত কলেজ, মাদরাসা (হায়ার
সেকেন্ডারি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ সভা অনুষ্ঠিত
হয়েছিল। আগামী ৩০ জুলাই কারিগরি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়
সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। আজকের এ সভায়
প্রায় ১ হাজার ৩০০ প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত
ছিলেন।

 
Top