একজন সাব্বির ভাই। একটি প্রতিষ্ঠান। একটি সংগঠন। একজন স্বপ্ন নির্মাতা। একজন অভিভাবক। ভালবাসার সবুজ ছোঁবল মানুষকে কিভাবে যে রাঙিয়ে দেয় তা বুঝতে পারতাম না তাঁর সংস্পর্শে না এলে। মানুষকে কী অপরিসীম মমতায় বুকে টেনে নেন তিনি। প্রিয়জনের অন্তর্গত যাতনা কি মলম দিয়ে লাঘব করে দেন বুঝা হতো না তাকে না দেখলে? দিনের পর দিন প্রতিদিনই আমরা তাঁকে নতুনভাবে আবিস্কার করি।
ছোট্ট এ জীবনে কতো জনের সাথেই তো সম্পর্ক গড়ে উঠলো। ছোট্ট কারণ বা কারণ ছাড়াই তো কতো সম্পর্ক নির্মমভাবে ভেঙে গেল। কতো মহান পুরুষদের আহলাদি আচরণ কি ঠুনকো অজুহাতে বিরক্তিতে রূপ নিলো। মর্মের সে আঘাত কি খুব সহজেই ভুলে যাবার।
কিন্তু আপনি সাব্বির ভাই; যখন আমার দাড়ি-মুছ উঠেনি সে সময় থেকেই তো আপনার বিশাল বলয় বুকে টেনে নিয়েছিলেন। আজ থেকে পনেরো বছর আগে সেই নবম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তো আমাকে আবিস্কার করেছিলেন আপনি। তারপর কতো জল ঢাললেন, কতো পরিশ্রম দিলেন। সেই সময়টুকুতে তালামীযের সাথে জড়িত হওয়া ও টুকটাক ছড়া-কবিতা লেখার কারণে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন আপনি। কই? কতোজনই বাহবা দিয়েছেন, পেছনে রেখে কাজ করিয়েছেন কিন্তু ওমন নিবিড়ভাবে কে আর যত্ন নিয়েছে। কে আর বলেছে- ‘চিন্তা করো না একদিন সব দারিদ্রতা দূর হয়ে যাবে- সময়ের ব্যবধানে সকল সমস্যার সমাধান হবে।’
মনে আছে ২০০৫ সালে জীবনের প্রথম সুদূর চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে রমজান মাসে আল্লাহর ওয়াস্তে ‘দারুল কিরাত’ পড়িয়ে যখন বাড়ী ফিরে সে রাত্রে আপনি আমার জন্য একটি পাঞ্জাবি ও ৫শ টাকার নোট দিয়ে মুক্তা ভাই ও করিমুল ভাইকে আমার বাড়ীতে পাঠিয়েছিলেন। সেই ছোট্ট মনে এর অনুভূতি কেমন ছিল বলে বুঝাতে পারবো না।
সাব্বির ভাই আজ আপনার কর্মের সাথে, চিন্তা চেতনার সাথে আমরা মিশে গেছি। আপনি তো তালামীযে ইসলামিয়াকে বুকের সাথে তাবিজ বানিয়ে নিয়েছেন। আপনার সেই নেতৃত্ব, আপনার গুণাবলীর কারণে মৌলভীবাজার জেলায় এক সময় অপ্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন ছিল তালামীয। আপনি ছিলেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। আপনার সেই যাদুর বাঁশির সুরে পঙ্গপালের মতো কর্মীরা জড়ো হয়েছিল। প্রতিটি মিছিলে আন্দোলনে সংগ্রামে সেই দারাজ কণ্ঠ আজো প্রতিধ্বনিত হয়। আল্লাহু আকবারের গগণবিদারী আওয়াজ বাতিল অপশক্তিতে চুরমার করে দিতো।
মনে পড়ে ভাই। আমাদের পীর ও মুর্শিদ আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলীর আহবানে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আহুত লং মার্চকে মাওলানা দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব কটূক্তি করে বলেছিলেন ‘পীর সাহেব লংমার্চ করছেন না ঢং মার্চ করছেন, সরকার তো আপনার এসব ঢং মার্চকে পাত্তাই দেবে না’ এর প্রতিবাদে কিভাবে গর্জে উঠেছিলেন। আপনার নেতৃত্বে মিছিলে মিছিলে আমরা সাঈদীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছিলাম।
সংগঠনের অনেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেছেন। অনেকেই অর্থকড়ি কামাই করছেন কিন্তু কতোজন মাঠের কর্মীদের মনে রাখছেন। আপনি তালামীয কর্মীদের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন কোন কর্মী খেয়েছে আর কোন কর্মী খায়নি। পকেটে কাউকো তো আর পাঁচশ টাকা, হাজার টাকার নোট গোঁজে দিতে দেখি না।
আজ আপনার অবস্থান কতো উর্ধ্বে। পৃথিবীর সকল প্রান্তেই তো আপনার বিচরণ। আপনি এখন সাইপ্রাসে দাওয়াতী সফরে অবস্থান করছেন। সেখানে হাফিয রুহুল আমিনের মতো অনেক ভাই রয়েছেন যারা আপনাকে আইকন মনে করেন। আপনি তো স্বপ্নের নির্মাতা। আশা করি সেখানেও স্বপ্নের বীজ পুঁথে দিবেন। দেখবেন সেই বীজ একদিন মহিরুহ হয়ে ডালপালা মেলবে। তাওহীদ ও রিসালতের নতুন পৃথিবী একদিন এদের মাধ্যমেও হয়তো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। গড়ে উঠবে আপনার স্বপ্নের সমান পৃথিবী। সেটুকুই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ।
 
Top